
ইমরান জাহেদ::
বিদেশী দাতা সংস্থার চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসন যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ার ফলে অনায়াসে পার পেয়ে যাচ্ছে তালিকাভূক্ত রোহিঙ্গা অপরাধীচক্র। যার ফলে একের পর এক খুন, ধর্ষন ও অপহরণ সহ নানা অপকর্ম বেড়েই চলছে। সম্প্রতি উপর্যপুরি ৩ গৃহবধু খুন ও জুয়াখেলা নিয়ে সংর্ঘষে ১২ জন আহত হওয়ার ঘটনায় গ্রামবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা। পুলিশ বলছে আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সরেজমিন রোহিঙ্গা বস্তি ও তৎসংলগ্ন রেজিস্ট্রার্ড শরণার্থী শিবির ঘুরে জানা যায়, ডি ব্লকের চেয়ারম্যান ইউনুছ খলিবা, সি ব্লকের চেয়ারম্যান আবু তাহের, জি ব্লকের চেয়ারম্যান বনের রাজা ইউনুছের সেকেন্ড ইন কমান্ড ডাকাত ছৈয়দ আলম ও ক্যাম্পের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুর বেগমের নেতৃত্বাধীন ১০/১২ জনের একটি সন্ত্রাসী চক্র ক্যাম্পে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্ঠির মাধ্যমে ফায়দা লুটে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোহিঙ্গা জানান, তারা নানা অপরাধ সংঘটিত করলেও বিদেশী দাতা সংস্থার অঘোষিত চাপের মুখে আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে তারা অনায়াসে পার পেয়ে যাচ্ছে। ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে লোমহর্ষক ঘটনাসহ নানা কু-কর্ম।
গত ২ অক্টোবর বস্তিতে বসবাসরত নুর মোহাম্মদ তার স্ত্রী খদিজা বেগমকে পরকীয়া প্রেমের জের ধরে পিটিয়ে হত্যা করে। ৪ অক্টোবর তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে প্রতিপক্ষ রোহিঙ্গারা জাহেদা বেগম(২৮) নামের গৃহবধুকে মর্মান্তিক ভাবে খুন করে। এসময় আরও ৭/৮ জন রোহিঙ্গা মহিলা আহত হয়েছে। ১০ অক্টোবর ৩ সন্তানের জননী হাসিনা আকতার (২৮)কে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেছে পাষন্ড স্বামী হোছন আহমদ। এর আগে ক্যাম্প দেখতে আসা ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির ছাত্রী রহিমা আকতার সুমি ও তার ভাই আব্দুল আমিন সহ ৪ জনকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। পরে গ্রামবাসী তাদের উদ্ধার করে। কোরবানীর ঈদ উপলক্ষ্যে প্রকাশ্য নিলামে ইজারা দেওয়া জুয়া খেলার আসরের কর্তৃত্ব নিয়ে কমপক্ষে ১২ জন রোহিঙ্গা আহত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এ জুয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও তাদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে অপরাপর রোহিঙ্গাদের অভিযোগ।
রোহিঙ্গা বস্তি ম্যানেজম্যান্ট কমিটির সেক্রেটারী রাকিবুল্লাহ সংঘটিত অপরাধের কথা স্বীকার করলেও নেপথ্যে কারা জড়িত তাদের নাম প্রকাশ করতে অপরাগতা জানান। তবে একাধিক রোহিঙ্গা লোকজন জানায়, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আবু শামা, শাহ আলম, ডাকাত ছৈয়দ আলম, জাবের, সেলিম ও আবু তৈয়বের নেতৃত্বাধিন শতাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ক্যাম্পে মদ, জুয়া, ধর্ষণ, অপহরণ ও মানবপাচার সহ হত্যা কান্ডে জড়িত থেকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করায় স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। কুতুপালংয়ে বসবাসরত জেলা পর্যায়ের বিএনপি নেতা বাদশা মিয়া চৌধুরী জানায়, রোহিঙ্গাদের সহিংস কর্মকান্ডে স্থানীয় গ্রামবাসী রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না।
সূত্র জানায়, ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সীমান্তের নাফ নদী অতিক্রম করে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা কুতুপালং বনভূমির পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। এসময় তৎকালীন জেলা প্রশাসক এসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে একাধিক বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে অনুপ্রবেশকারী এসব রোহিঙ্গাদের কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা না করার জন্য স্থানীয় এনজিও গুলোর প্রতি কড়া নির্দেশ প্রদান করেন।
ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম জানান, চিহ্নিত দাগী সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা আত্মগোপনে অবস্থান করে অপরাধের কলকাটি নাড়ছে। যে কারণে তাদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ এ এস থোয়াই জানান, খুনের সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এব্যাপারে ক্যাম্প ইনচার্জ নুরুল আলমের সাথে যোগাযোগ করার একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
পাঠকের মতামত